এক কলেজে ৩ অধ্যক্ষ শিমুলবাড়ি সরকারি কলেজে অচলাবস্থার গল্পএক কলেজে ৩ অধ্যক্ষ শিমুলবাড়ি সরকারি কলেজে অচলাবস্থার গল্প

এক কলেজে ৩ অধ্যক্ষ

এক কলেজে ৩ অধ্যক্ষ : শিমুলবাড়ি সরকারি কলেজে অচলাবস্থার গল্প
✍️ বিশেষ প্রতিবেদন | www.news.divpo.com | লেখক: সুমন চৌধুরী

বাংলাদেশের একটি সরকারি কলেজে একযোগে তিনজন অধ্যক্ষ! শুনতে বিস্ময়কর হলেও এটাই বাস্তব চিত্র নীলফামারীর জলঢাকার শিমুলবাড়ি সরকারি কলেজে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে অধ্যক্ষ পদে ত্রিমুখী দখল-দাবির এক জটিল সংকটে নিমজ্জিত, যার ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম, ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিরাজ করছে অনিশ্চয়তা এবং শিক্ষক মহলে চলছে বিভ্রান্তি।

🎓 কলেজটি সরকারি হলো, সংকটের শুরু সেখান থেকেই

২০২১ সালের ৮ আগস্ট শিমুলবাড়ি ডিগ্রি কলেজটিকে সরকার জাতীয়করণ করে। জাতীয়করণ হওয়ার পর, সরকারিকৃত কলেজ আত্তীকরণ বিধিমালা ২০১৮ অনুসারে কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুল হান্নান-কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)-এর আদেশে।

তিনি নিয়মমাফিক গত চার বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে হঠাৎ করেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখা-২ এর একটি আদেশে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা অধ্যাপক এ. কে. এম সিদ্দিকুর রহমান-কে শিমুলবাড়ি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয়—যা ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

এক কলেজে ৩ অধ্যক্ষ শিমুলবাড়ি সরকারি কলেজে অচলাবস্থার গল্প
এক কলেজে ৩ অধ্যক্ষ শিমুলবাড়ি সরকারি কলেজে অচলাবস্থার গল্প

⚖️ আইনি বিরোধ: নিয়ম বনাম বাস্তবতা

অধ্যাপক মো. আব্দুল হান্নান দাবি করেন, ২০১৮ সালের আত্তীকরণ বিধিমালা অনুযায়ী, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাকে নন-ক্যাডার কলেজে নিয়োগ দেওয়ার কোনো বিধান নেই। ফলে তিনি বিষয়টি আদালতের দারস্থ হন।

২০২৫ সালের ২৭ মে তিনি হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন, যার প্রেক্ষিতে ১ জুন আদালত তিন মাসের জন্য নিয়োগ আদেশ স্থগিত করে এবং নিয়োগের বিষয়ে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও জ্যেষ্ঠতা বিবেচনার ভিত্তিতে তাঁকেই অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের অনুমতি দেয়।

🎯 তবে বাস্তবে কী ঘটল?

আদালতের স্পষ্ট আদেশ থাকা সত্ত্বেও অধ্যাপক এ. কে. এম সিদ্দিকুর রহমান আবদুল হান্নানকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে বরং তাঁকে বেতনবঞ্চিত করেন। শুধু তাই নয়, কলেজের সহকারী অধ্যাপক অশোক কুমার রায়-কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন।

ফলে, বর্তমান পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে এমন:

  1. আদালতের নির্দেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ – মো. আব্দুল হান্নান
  2. প্রশাসনিক আদেশে নিযুক্ত অধ্যক্ষ – এ. কে. এম সিদ্দিকুর রহমান
  3. কলেজ অভ্যন্তরীণভাবে দায়িত্বে থাকা – অশোক কুমার রায়

📢 সংবাদ সম্মেলনে ফুঁসে উঠলেন আব্দুল হান্নান

৮ জুলাই, জেলা শহরের একটি রেস্টুরেন্টে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক হান্নান বলেন—

“বিধি মোতাবেক আমি অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছিলাম। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় অযৌক্তিকভাবে ক্যাডারভুক্ত অধ্যাপককে এই কলেজে পদায়ন করে। আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও আমাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে আমার বেতন বন্ধ করা হয়েছে। পরিবার নিয়ে চরম আর্থিক দুরবস্থায় পড়েছি।”

তিনি আরও বলেন,

“শিক্ষাব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হবে। আদালতের আদেশ অমান্য করে প্রশাসনিক দমন-পীড়নের মাধ্যমে আমাকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে।”

📞 সংশ্লিষ্টদের প্রতিক্রিয়া: রহস্যময় নীরবতা

  • অশোক কুমার রায়, যিনি বর্তমানে কার্যত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন:

    “এ মুহূর্তে চিকিৎসকের কাছে থেকে রংপুর থেকে ফিরছি। পরে কথা বলব।”

  • অধ্যাপক এ. কে. এম সিদ্দিকুর রহমান, যিনি মূল নিয়োগপ্রাপ্ত, ফোন রিসিভ করে বলেন:

    “আমি ঢাকায়, শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্যারের রুমে আছি। ফোনে চার্জ নেই। পরে কথা বলব।”
    কিছুক্ষণ পর অপরিচিত নম্বর থেকে তাঁর স্ত্রীর পরিচয়ে এক নারী ফোন করে জিজ্ঞেস করেন,
    “আপনি কেন সিদ্দিক সাহেবকে ফোন দিয়েছেন? আমাকে বলেন আপনি কী জানতে চান।”
    এবং রীতিমতো চড়াও হন।

এই প্রতিক্রিয়া প্রশাসনিক স্বচ্ছতার প্রশ্নে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

🧠 বিশ্লেষণ: একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজনীতির দুঃখজনক মঞ্চ?

এই ঘটনাকে শুধু একটি কলেজের অভ্যন্তরীণ সংকট ভাবলে ভুল হবে। এটি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় অনিয়ম, প্রশাসনিক দ্বিচারিতা এবং আদালতের রায় অমান্য করার সাংঘাতিক প্রমাণ। যেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে তিনজন অধ্যক্ষ দায়িত্ব দাবি করছেন, সেখানে শিক্ষকতা, প্রশাসন, শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ—সবই হয়ে উঠছে এক বিশৃঙ্খল খেলনার মতো।

বিশ্লেষকদের মতে,

  • আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রশাসনিক নিয়োগ গ্রহণযোগ্য নয়।
  • নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ক্ষমতা প্রয়োগ শিক্ষাকে রাজনীতিকরণ করে তোলে।
  • একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও নৈতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়।

🛑 এখন কী প্রয়োজন?

🔹 শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ: বিষয়টি পর্যালোচনা করে দ্রুত একটি নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া উচিত।
🔹 আদালতের রায় মেনে চলা: সবার আগে আইন ও বিধির শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক।
🔹 শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা: শিক্ষক-প্রশাসনিক দ্বন্দ্বের বলি যেন শিক্ষার্থীরা না হয়।
🔹 গণমাধ্যমের অনুসন্ধান: ভবিষ্যতে এমন অনিয়ম যেন আর না ঘটে, সে জন্য তথ্যপ্রমাণ ভিত্তিক বিশ্লেষণ জরুরি।

📌 উপসংহার: নিয়োগ নয়, এটি নৈতিকতার লড়াই

শিমুলবাড়ি কলেজে তিনজন অধ্যক্ষের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কেবল একটি লোকাল ইস্যু নয়—এটি বাংলাদেশের শিক্ষা প্রশাসনের নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিচ্ছবি। একজন শিক্ষকের অধিকার, আদালতের মর্যাদা এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ—এই তিনটি বিষয়ে স্পষ্ট, দ্রুত এবং দৃঢ় পদক্ষেপ না নিলে বিশ্বাসযোগ্যতা, ন্যায়বিচার ও শিক্ষার মান ধ্বংসের মুখে পড়বে।

📢 সতর্ক পাঠকের জন্য: এই প্রতিবেদনটি কোনো পক্ষের হয়ে নয়—তথ্যনির্ভর সত্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে রচিত।
🌐 আরও তথ্যবহুল ও অনুসন্ধানভিত্তিক প্রতিবেদন পেতে ভিজিট করুন: www.news.divpo.com
📺 ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন – শিক্ষার প্রতিটি স্তরের খবর সবার আগে পেতে।

আরো দেখুনঃ কলেজের নতুন নাম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনা

শিক্ষকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের আহ্বান

এসএসসি পরীক্ষার ফল দেখবেন যেভাবে

অনলাইন ক্যারিয়ার গঠন সহজ পদ্ধতি দেখুন 

এইচএসসির আইসিটি প্রশ্নে দুটি ভুল, সবাইকে নম্বর দেয়ার দাবি

উত্তাল সমুদ্রে নেমে ভেসে গেলেন চবির ৩ শিক্ষার্থী

নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ জনস্বাস্থ্য প্রকল্প 2025

 

এক কলেজে ৩ অধ্যক্ষ শিমুলবাড়ি সরকারি কলেজে অচলাবস্থার গল্প এক কলেজে ৩ অধ্যক্ষ শিমুলবাড়ি সরকারি কলেজে অচলাবস্থার গল্প এক কলেজে ৩ অধ্যক্ষ শিমুলবাড়ি সরকারি কলেজে অচলাবস্থার গল্প এক কলেজে ৩ অধ্যক্ষ শিমুলবাড়ি সরকারি কলেজে অচলাবস্থার গল্প এক কলেজে ৩ অধ্যক্ষ শিমুলবাড়ি সরকারি কলেজে অচলাবস্থার গল্প এক কলেজে ৩ অধ্যক্ষ শিমুলবাড়ি সরকারি কলেজে অচলাবস্থার গল্প

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *