নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ জনস্বাস্থ্য প্রকল্পনজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ জনস্বাস্থ্য প্রকল্প

নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ জনস্বাস্থ্য প্রকল্প
‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি’

গ্রামীণ জনপদের হতদরিদ্র মানুষদের জন্য নিরাপদ স্যানিটেশন এবং পানিসম্পৃক্ত সুবিধা প্রদানে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে কার্যক্রম শুরু করা ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি’ প্রকল্পটি আজ অগণিত অনিয়ম, দুর্নীতি ও ব্যর্থতার নীড়ে পরিণত হয়েছে। ৩০ জেলার ১ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকার এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ও এআইআইবি থেকে পাওয়া ১ হাজার ৮৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণের বিপুল অর্থ অপচয়ে দারিদ্র্য বিমোচন না হয়ে হয়েছে শুধুমাত্র কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারদের ব্যক্তি উন্নয়নেই সহায়তা।

নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ জনস্বাস্থ্য প্রকল্প
নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ জনস্বাস্থ্য প্রকল্প

ছর্ণা-ছিন্ন পরিষেবা: কাজের অগ্রগতি ৪৬% অথচ অধিকাংশ অবকাঠামো অকেজো

প্রকল্পের নির্ধারিত শেষ সময় ২০২৫ সালের ডিসেম্বর এখনও বাকি থাকলেও এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৪৬%। অথচ ইতোমধ্যেই নির্মিত ট্যুইন পিট ল্যাট্রিন, পাবলিক টয়লেট ও হাত ধোয়ার স্টেশন—এসবের অধিকাংশই কেবল নামেই রয়েছে, কার্যত পরিত্যক্ত ও ব্যবহার অনুপযোগী।    নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত

  • টয়লেটের নির্মাণ: অনেক জেলায় টয়লেটের টাইলস পড়ে গেছে, ফিটিংস নষ্ট, দরজা-ফ্রেম দুর্বল; কমিউনিটি ক্লিনিকের টয়লেটগুলো ক্লিনিক থেকে দূরে বা ডোবার ধারে নির্মিত হওয়ায় ব্যবহারই হচ্ছে না।
  • টুইন পিট ল্যাট্রিন: দরিদ্রদের জন্য নির্মিত হলে ও সেটি নির্মাণে নিম্নমানের কাঠ ব্যবহার, দুর্বল নকশা ও দূরত্বজনিত কারণে অনেকগুলি ল্যাট্রিনই পরিত্যক্ত।
  • হাত ধোয়ার স্টেশন: স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসার সামনে স্থাপিত হলেও টাইলস ভেঙে, ফিটিংস নষ্ট ও অব্যবহার্য অবস্থায় পড়ে আছে।
  • পাইপলাইনের ত্রুটি: মাটির তিন ফুট নিচে বসানোর স্পেসিফিকেশন থাকলেও প্রায়ই তিন ইঞ্চি–নয় ইঞ্চি মাটি খুঁড়ে পাইপ বসানো হয়েছে; বালু চাপ দেওয়া হয়নি অথবা মাত্র এক–দুই ইঞ্চি বালু মিশ্রিত; নিম্নমানের কয়েল পাইপের কারণে লিকেজ ও ভাঙনের ঘটনা আরও বেড়েছে।

পরিবেশগত অনুমোদন অনুপস্থিতি ও অডিট আপত্তি ঝুলন্ত
বহু জেলায় জলাশয় বা পুকুর ভরাট করে পাইপলাইন বসানো হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া এ পর্যন্ত দু’বার হয় অডিট—যাতে অডিট আপত্তি চিহ্নিত হয়েছে, তবে সেসব নিষ্পত্তি হয়নি। প্রধান কার্যালয়ের সাতজন পরামর্শকের সেটআপে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭ কোটি টাকা, তবুও তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণে গুণগতমান প্রশ্নবিদ্ধ।

জেলা সমন্বয়কারীদের কাজ আটকে ও প্রতিবেদন বিভ্রাট

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলা পর্যায়ের সমন্বয়কারীরা ঠিকাদারদের অনিয়ম চিহ্নিত করে প্রতিবেদন জমা দিতে গেলে বাধা পেয়েছেন। পিডি প্রকৌশলী মো. তবিবুর রহমান তালুকদার-এর নির্দেশে নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরি থেকে বিরত থাকতে হয়েছে—চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়েছেন তারা। টেন্ডার স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী বিল যাচাই-বাছাই করার ক্ষমতা জেলা সমন্বয়কারীদের দেওয়া হয়নি, ফলে বিল ভেরিফিকেশন ছাড়াই পরিশোধ হয়েছে কোটি কোটি টাকা।    নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত

“আমি নিজে কোনো অনিয়ম করিনি, পিডির পক্ষে সব দেখভাল করা সম্ভব নয়,” — প্রকল্প পরিচালক মো. তবিবুর রহমান তালুকদার দাবি করেছেন।

আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, পিডির সহযোগিতা না থাকলে ঠিকাদাররা এত বড় অনিয়ম করতে না পারতো। নেতিবাচক প্রতিবেদন গোপন রাখতে পিডি বিভিন্নভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন, এমনকি প্রতিবেদককে রিপোর্ট প্রকাশ না করতে অনুরোধও করেছেন।

প্রস্তাবিত সমাধান ও সুপারিশ

আইএমইডির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে দ্রুত নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে:

  1. নিম্নমানের উপকরণ পরিবর্তন: নিম্নমানের সামগ্রী সরিয়ে গুণগত মানসম্পন্ন উপকরণ ব্যবহার।
  2. দুর্নীতির আর্থিক ফেরত: ঠিকাদারদের থেকে সরকারের অপচয় হওয়া অর্থ আদায় করে কোষাগারে জমা।
  3. জেলা সমন্বয়কারীদের ক্ষমতায়ন: বিল যাচাই-বাছাই ও নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রদান নিশ্চিতকরণে তাদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা প্রদান।      নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত
  4. রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা: প্রতি জেলায় পর্যায়ক্রমান্বয়ে রক্ষণাবেক্ষণ ও ত্রুটিমুক্তি সভা বাস্তবায়ন।
  5. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি: প্রকল্প পরিচালকের প্রত্যেক কার্যক্রমে জনসমক্ষে অডিট প্রতিবেদন ঘোষণা ও বাছাইকৃত কাজের পর্যবেক্ষণ।

উপসংহারে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে একনেকের অনুমোদন নেওয়া ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি’ প্রকল্পটি আজ দুর্নীতির এক দুর্ভাগা অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজন নিষ্ঠার সঙ্গে গুণগত মান নিশ্চিত করা ও দুর্নীতির দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, নইলে এই বিপুল অর্থ আমাদের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে নয়, অসৎ হস্তে অপচয়ে বিলীন হয়ে যাবে। © news.divpo.com

আরো দেখুনঃ কলেজের নতুন নাম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনা

শিক্ষকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের আহ্বান

এসএসসি পরীক্ষার ফল দেখবেন যেভাবে

অনলাইন ক্যারিয়ার গঠন সহজ পদ্ধতি দেখুন 

নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত  নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত

নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *