প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের নির্দেশ : একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন
১. প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনীয়তা
দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির অভিমুখে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল (১৪ জুলাই, সোমবার) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আহ্বান করা একটি উচ্চস্তরীয় বৈঠকে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রদান করেছেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের প্রায় ৩২ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য, যা মোটসম্মিলিত শিক্ষার ব্যবস্থাকে অচল করে দিচ্ছে। প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের নির্দেশ

২. বৈঠকের মূল আলোচ্যসূচি
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া সহ অন্যান্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা পর্বে প্রধান উপদেষ্টা প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ ছাড়াও নিম্নলিখিত বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন:
- বিদ্যালয়ের সাধারণ অবস্থা ও শিক্ষার মান: প্রতিটি জেলা ও উপজেলার স্কুল পর্যায়ে শিক্ষাদান পরিবেশ, পাঠদান উপকরণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপ্রেরণা ও মনোযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
- প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব ও ভূমিকা: বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক নেতৃত্ব, শিক্ষকের কর্মদক্ষতা নিরীক্ষণ ও শিখন-শিখানোর মান উন্নয়নের রোলে প্রধান শিক্ষকের অবদান। প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের নির্দেশ
- প্রকল্পের অগ্রগতি ও বিলম্ব: পূর্বের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অনাদায়ীতা, নীতি-নিয়ম লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যালোচনা।
৩. প্রধান শিক্ষকের নিয়োগে নির্দেশনা
প্রধান উপদেষ্টা নিম্নলিখিত মূলবান্দ্য পয়েন্টে কারিগরি ও প্রশাসনিক ত্বরান্বিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন:
- অত্যন্ত দ্রুত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
সরকারী কর্ম কমিশন (পিএসসি) এর সঙ্গে সমন্বয় করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, এবং উপজেলা ভিত্তিক কোটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। - অভিজ্ঞতা ও তরুণদের মধ্যে সুষম সুযোগ
- বিষয়ভিত্তিক ক্যাটাগরি: দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করা, প্রশাসনিক দক্ষতা সম্পন্ন প্রার্থীদের জন্য বিশেষ কোটা।
- তরুণদের উত্সাহ: গত পাঁচ বছরের মধ্যে শিক্ষকতা শুরু করা তরুণদের জন্য নির্দিষ্ট সিটের সংরক্ষণ।
- স্বচ্ছতার জন্য অনলাইন আবেদন–প্রক্রিয়া
আবেদন, বাছাই, লিখিত–মৌখিক পরীক্ষা এবং ফলাফল প্রকাশের প্রতিটি ধাপ অনলাইনে (এই–Governorate.gov.bd) সম্পন্ন হবে, যাতে দুর্নীতি-প্ররোচনা বা সুপারিশমূলক নিয়োগ নিবারণ করা যায়। - বদলি নীতিমালার সংস্কার
আজমি বদলি প্রার্থীর জন্য নির্দিষ্ট ‘বদলি চেম্বার’, যেখানে লিখিত আবেদন, ডিজিটাল সারচার্জ এবং পূর্বের কর্মপরিবেশের মূল্যায়নের ভিত্তিতে বদলি অনুমোদন রুদ্ধ হবে।
৪. নারীবান্ধব ও প্রযুক্তিনির্ভর বিদ্যালয়
শিক্ষার প্লেনিং ও বাস্তবায়নে লিঙ্গ সমতা এবং ডিজিটালাইজেশনের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা নিম্নলিখিত দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন:
- নারীবান্ধব অবকাঠামো: স্কুল নির্মাণ বা সংস্কার কমিটিতে অন্তত একজন নারী স্থপতি রাখা বাধ্যতামূলক, যাতে শৌচাগার, বসার আসন, উঠান–অন্তর্বর্তীণ পথ ইত্যাদি নারীর নিরাপত্তা ও আরামদায়ক হয়।
- ইন্টারনেট ও মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ: প্রত্যেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ এবং একাধিক এমআইএস-বেসড ডিভাইসসহ মাল্টিমিডিয়া ল্যাব সেটআপ করতে হবে।
- ডিজিটাল শিক্ষাসামগ্রী: সরকারী ‘বাগান’ প্ল্যাটফর্ম থেকে শিক্ষামূলক ভিডিও, অডিও, ইবুক সরবরাহ করে শিক্ষার্থীদের স্বশিক্ষণ প্রচার।
৫. প্রত্যাশিত ফলাফল ও ভবিষ্যতের অগ্রগতি
এই নির্দেশনামূলক সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হলেই নিম্নলিখিত সুফল আশা করা যাচ্ছে:
- শিক্ষাব্যবস্থার স্বনির্ভরতা: দায়িত্বশীল প্রধান শিক্ষকের দ্বারা বিদ্যালয় মনিটরিং ও শিক্ষাদান পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
- শিক্ষার্থীদের মনোবল বৃদ্ধি: আকর্ষণীয়, প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদানের মাধ্যমে শেখার আগ্রহ ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে অবদান।
- শিক্ষকের পেশাগত উন্নয়ন: পরিষ্কার বদলি নীতি ও নিয়োগ মানদণ্ড তাদের কর্মপরিবেশ উন্নত করবে।
- লিঙ্গ সমতা ও নিরাপত্তা: নারীদের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ বাড়বে, ছাত্রীদের স্কুলে উপস্থিতি ও পারফরম্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
৬. উপসংহার
প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষা নিয়ে জাতির সবচেয়ে দুর্বল প্রান্তে কাজ শুরু করে, ভবিষ্যতের শক্ত ভিত্তি স্থাপন করে। প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের নির্দেশনা—শিক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতি পুরণ নয়, বরং একটি ব্যাপক সংস্কার যাত্রার সূচনা। সুষ্ঠু নিয়োগ, অনলাইন স্বচ্ছতা, নারীবান্ধব অবকাঠামো এবং মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষে রূপান্তরিত এই উদ্যোগ নিশ্চিতভাবে দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবে এবং দেশের তরুণ প্রজন্মকে সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
শিক্ষার সব নিউজ সবার আগে পেতে এখানে ক্লিক করুন
আরো দেখুনঃ কলেজের নতুন নাম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনা
শিক্ষকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের আহ্বান
এসএসসি পরীক্ষার ফল দেখবেন যেভাবে
অনলাইন ক্যারিয়ার গঠন সহজ পদ্ধতি দেখুন
এইচএসসির আইসিটি প্রশ্নে দুটি ভুল, সবাইকে নম্বর দেয়ার দাবি
উত্তাল সমুদ্রে নেমে ভেসে গেলেন চবির ৩ শিক্ষার্থী
নজিরবিহীন অনিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ জনস্বাস্থ্য প্রকল্প 2025
