কলেজের নতুন নাম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনাকলেজের নতুন নাম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনা

কলেজের নতুন নাম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনা

জাতীয়করণকৃত সরকারি কলেজসমূহে নতুন নাম পালনের কড়া নির্দেশনা

সরকারি কলেজগুলোতে “শেখ” পরিবারের প্রত্যেক উল্লেখিত নাম ফেলে নবনাম প্রয়োগ না করা গেলে তা ‘দায়িত্বে অবহেলা’ হিসেবে গণ্য করা হবে—এমন কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। ৭ জুলাই প্রেরিত এক আনুষ্ঠানিক চিঠিতে অধিদপ্তর জানিয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ২৮ মে, ২০২৫ তারিখের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী জাতীয়করণকৃত ৬৮টি কলেজের পুরনো নামের মধ্যে যদি ‘শেখ’ পরিবারের কোনো সদস্যের নাম সংযুক্ত থাকে, সেগুলো সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে নতুন নামের ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

কলেজের নতুন নাম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনা
কলেজের নতুন নাম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনা

নতুন নামের নির্দেশনার পটভূমি
– ২৮ মে জারি হওয়া ওই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও অন্যান্য জেলা-পল্লী মিলিয়ে মোট ৬৮টি সরকারি কলেজের নামের ‘শেখ কল্যাণ ভূমিকা’ বা ‘শেখ মুজিব’ ইত্যাদি উপসর্গ সরিয়ে নতুন নাম প্রদান করা হয়।
– উদ্দেশ্য: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণে পারিবারিক প্রভাবমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে, শিক্ষার্থীদের মনোযোগ মূল শিক্ষাবিষয়ক কর্মকাণ্ডে কেন্দ্রীভূত করা।

নির্দেশনার প্রধান বৈশিষ্ট্য

  1. নাম ব্যবহার ও পত্র যোগাযোগ
    • সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক কলেজের অধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা-সদস্যদের বলা হয়েছে, সকল আনুষ্ঠানিক পত্র, সার্কুলার, মুদ্রিত কাগজপত্র ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শুধুমাত্র নবনামই ব্যবহার করতে হবে।
    • পুরনো কোনো নাম দেখলেই সেটিকে ‘দায়িত্বে অবহেলা’র অন্তর্ভুক্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে।
  2. ব্যত্যয়ের শাস্তি
    • নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষা বিভাগীয় কর্মকর্তা ও কলেজের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অনাস্থা ও বিচ্যুতি—উভয়ই প্রক্রিয়া শুরু করার কথা বলা হয়েছে।
    • একাধিকবার সতর্কতার পরও যদি নতুন নাম প্রয়োগে ব্যর্থতা দেখা যায়, তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দাযিত্বমুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
  3. ৫৮ নম্বর ক্রমিক ব্যতিক্রম
    • প্রজ্ঞাপনের ক্রমিক নম্বর ৩৬–এ অর্ন্তভূক্ত গাজীপুরের সরকারি শহীদ তাজউদ্দিন ডিগ্রি কলেজসম্বন্ধে বিশেষ উল্লেখে বলা হয়েছে, এখানে নাম পরিবর্তনের নির্দেশনা প্রযোজ্য নয়।
    • কলেজটিতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের তীব্র প্রতিবাদ এবং ঐতিহ্যগত মূল্যবোধের কারণে পূর্বের নাম বহাল রাখার সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুর কলেজের প্রতিবাদ ও আগের সিদ্ধান্তের উল্টো সিদ্ধান্ত
ফেনী ও গাজীপুরসহ কয়েকটি স্থানে প্রথমে নাম বদল চাপিয়ে দিলে শিক্ষার্থীরা নেটমাধ্যমে এবং মুখোশধারী বিক্ষোভের মাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করেন। গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের মাধ্যমে ভারতের এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী গ্রুপ পর্যন্ত স্মারকলিপি যায়। প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই মন্ত্রণালয় বাধ্য হয়ে ৩৬ নম্বর ক্রমিক বাদ দিয়ে ‘শহীদ তাজউদ্দিন ডিগ্রি কলেজ’ নাম সচল রাখার ঘোষণা দেয়।

প্রশাসনিক পর্যায়ে এখন করণীয়

  • প্রতিটি কলেজের প্রধান কার্যালয় তিন দিনের মধ্যে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভার্সনে নবনাম নিশ্চিতকরণের “হালনাগাদ সার্টিফিকেট” মাউশি-তে পুনর্দাখিল করবে।
  • শিক্ষা বিভাগীয় বিভাগীয় কর্মকর্তা পর্যায়ে যেন কোনো অনিয়ম বা ভ্রান্তি ছড়ায় না, তা খতিয়ে দেখবে আঞ্চলিক সচিবালয়।
  • মাউশি শিক্ষাখাতের আইটি সিস্টেমে কেন্দ্রীয়ভাবে ৬৮টি কলেজের নামের রিপোজিটরি আপডেট করা হচ্ছে, যাতে তথ্য–প্রযুক্তি দ্বারা ত্রুটি শূন্যের কোটায় নেমে আসে।

ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ও নেতিবাচক উৎপাত
নাম পরিবর্তন নিয়ে অনেকে মনে করেন, জাতীয় স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে নতুন যুগোপযোগী পরিচয় আরও স্পষ্ট হবে। অপরদিকে, ঐতিহ্য রক্ষায় বিশ্বাসী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক বিশ্লেষকরা দায়িত্বপ্রাপ্তদের কঠোর সমালোচনা করছেন। তবে মাউশি পক্ষ থেকে জোর দেয়া হয়েছে, “সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়ে গভীর বিবেচনা সম্পন্ন করেছে; তাই এখন এর প্রতিফলন নেতিবাচক হোক বা ইতিবাচক, সবাইকে সহমর্মীতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কাজ করতে হবে।”

সর্বশেষ সিদ্ধান্ত
মাউশি–র চিঠির শেষাংশে স্পষ্ট করা হয়েছে, “নামের যেকোনো অননুমোদিত উল্লেখ বা পুরনো নাম ব্যবহার উদ্বেগজনক; এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের চিঠি, সার্কুলার, সিম্পোজিয়াম ও প্রকাশনাসমূহের আওতাধীন সকল প্রক্রিয়া স্থগিত বলে গণ্য হবে।” ফলে আগামী কালের মধ্যে সরকারি কলেজগুলোকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে হবে—নতুন পরিচয় বহন করতে, ঐতিহ্য ছাপিয়ে আধুনিক শিক্ষার অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখতে।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *